বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা: যে ৫টি বিষয় জানলে আর চিন্তা নেই!

webmaster

방글라데시의 의료 서비스 - **Prompt:** A realistic, detailed image of an elderly Bangladeshi woman, looking concerned yet hopef...

স্বাস্থ্যসেবার মতো একটা মৌলিক অধিকার নিয়ে যখন কথা হয়, তখন আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটটা সত্যিই ভাবিয়ে তোলে। আমি নিজে দেখেছি, গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো সামান্য সর্দি-কাশির জন্যও কত ভোগান্তি পোহান। শহরের দিকে হয়তো আধুনিক হাসপাতাল আছে, কিন্তু সেখানেও চিকিৎসা খরচ আর সিরিয়ালের দীর্ঘ লাইন দেখে অনেকেই ভরসা হারিয়ে ফেলেন। মনে পড়ে, একবার আমার এক আত্মীয়কে রাতারাতি ঢাকা নিয়ে যেতে হয়েছিল, শুধু একটা ভালো ডাক্তার দেখানোর জন্য!

এই যে শহর আর গ্রামের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার এত বড় ফারাক, এটা সত্যিই কষ্ট দেয়।তবে হ্যাঁ, আশার আলোও দেখতে পাচ্ছি। দেশের স্বাস্থ্য খাতে এখন বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ চলছে, বিশেষ করে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া, ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট দেখা – এসব নতুন সুবিধা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলছে। সরকারও চেষ্টা করছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে, যাতে গ্রামের মানুষ হাতের কাছেই প্রাথমিক চিকিৎসা পান। বেসরকারি খাতও এগিয়ে আসছে, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এখনো জনবল সংকট, দুর্নীতির মতো কিছু বড় চ্যালেঞ্জ তো আছেই।কিন্তু এই সমস্যাগুলো সমাধান করা গেলেই আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার চেহারাটাই পাল্টে যাবে। দেশের মানুষের সুস্থ জীবন নিশ্চিত হলে আমাদের অর্থনীতিও আরও গতি পাবে, কী বলেন?

আমার মনে হয়, এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চললে এবং সঠিক তথ্য জানলে আমরা সবাই মিলে একটা সুস্থ বাংলাদেশ গড়তে পারব।চলুন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেই, কোথায় সমস্যা আর কোথায় সম্ভাবনা, সবদিক থেকে পরিষ্কারভাবে আলোচনা করা যাক।


গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার আড়ালে থাকা বাস্তবতা

방글라데시의 의료 서비스 - **Prompt:** A realistic, detailed image of an elderly Bangladeshi woman, looking concerned yet hopef...

আমাদের দেশের একটা বড় অংশই গ্রামে বাস করে, আর আমি নিজে দেখেছি গ্রামের মানুষের জন্য ভালো চিকিৎসা পাওয়াটা কতটা কঠিন একটা ব্যাপার। শহরের আধুনিক হাসপাতালগুলো থেকে তারা অনেক দূরে থাকেন, আর যাতায়াত ব্যবস্থাও সব সময় সুবিধার থাকে না। ধরুন, রাতের বেলা হঠাৎ কারো গুরুতর অসুখ হলো, তখন নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার পাওয়াটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় দেখা যায়, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র বা আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই, এমনকি পর্যাপ্ত ডাক্তার বা নার্সও পাওয়া যায় না। ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি বা জ্বরের মতো ছোটখাটো অসুস্থতাও অনেক সময় বড় আকার ধারণ করে। একবার আমার গ্রামের এক দূর সম্পর্কের খালা পেটের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন, কিন্তু গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সময়মতো শহরে নিয়ে যেতে না পারলে হয়তো একটা বড় বিপদ হয়ে যেত। এই যে চিকিৎসা পেতে গিয়ে এত ভোগান্তি, এটা সত্যিই মনকে নাড়া দেয়। তাই গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়াটা এখন সবচেয়ে জরুরি বলে আমি মনে করি। স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো শক্তিশালী করা এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিশ্চিত করা খুবই প্রয়োজন। এর সাথে সাথে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ, যাতে মানুষ সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত হয়।

চিকিৎসক ও ঔষধের দুষ্প্রাপ্যতা

গ্রামাঞ্চলে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো যোগ্য ডাক্তারের অভাব এবং প্রয়োজনীয় ঔষধের সহজলভ্যতা না থাকা। বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায়, ভালো ডাক্তাররা শহরে থাকতে পছন্দ করেন, ফলে গ্রামের মানুষ বাধ্য হন হাতুড়ে ডাক্তার বা ফার্মেসির উপর ভরসা করতে। এর ফলে ভুল চিকিৎসা হওয়ার ঝুঁকি তো থাকেই, অনেক সময় রোগের জটিলতাও বেড়ে যায়। আমি নিজে বহুবার দেখেছি, ছোটখাটো রোগের জন্যেও মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়, শুধু শহরে গিয়ে একজন এমবিবিএস ডাক্তার দেখানোর জন্য। আর ঔষধের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা – জরুরি ঔষধ অনেক সময় গ্রাম্য ফার্মেসিতে পাওয়া যায় না, বা দাম অনেক বেশি চাওয়া হয়। এই পরিস্থিতি সত্যিই হতাশাজনক।

স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব

শুধু চিকিৎসার অভাবই নয়, গ্রামীণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। অনেকে এখনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না, বা রোগ প্রতিরোধের গুরুত্ব বোঝেন না। যেমন, ডায়রিয়া বা আমাশয়ের মতো সাধারণ রোগেও অনেকে সঠিক চিকিৎসা না নিয়ে কুসংস্কারের আশ্রয় নেন। শিশুদের টিকাকরণের গুরুত্ব বা গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও অনেকের স্বচ্ছ ধারণা নেই। এই সচেতনতার অভাবের কারণে ছোট ছোট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো অকালে প্রাণহানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয়, স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প ও সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন করাটা খুবই জরুরি।

শহুরে চিকিৎসার বাড়তি চাপ আর আমাদের বিকল্প ভাবনা

শহরে তো হাসপাতাল আর ক্লিনিকের অভাব নেই, কিন্তু সেখানেও রয়েছে আরেক ধরনের সমস্যা – মাত্রাতিরিক্ত ভিড় আর চিকিৎসার আকাশছোঁয়া খরচ। ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বড় শহরগুলোর হাসপাতালগুলোতে গেলে মনে হয় যেন মানুষের মেলা বসেছে। একটা ডাক্তার দেখানোর জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে লেগে যায় সপ্তাহের পর সপ্তাহ। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কথা নাই বা বললাম, সেখানে চিকিৎসা খরচ এতটাই বেশি যে মধ্যবিত্তদের পক্ষেও তা বহন করা কঠিন হয়ে পড়ে। একবার আমার নিজের বাবা অসুস্থ হলে তাকে একটা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হয়েছিল, বিল দেখে তো আমার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! এই পরিস্থিতিতে অনেকেই নিরুপায় হয়ে পড়েন। শহরের এই তীব্র চাপ কমানোর জন্য নতুন নতুন সমাধান খুঁজে বের করাটা এখন সময়ের দাবি। শুধু বড় বড় হাসপাতাল বাড়ালেই হবে না, বরং স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত, যাতে ছোট শহর বা উপজেলা পর্যায়েও মানসম্মত চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এতে করে বড় শহরগুলোর উপর চাপ কমবে এবং মানুষের ভোগান্তিও কিছুটা লাঘব হবে। এছাড়া, চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যের উপরও জোর দেওয়া উচিত, যাতে রোগ হওয়ার আগেই তা ঠেকানো যায়।

অপেক্ষার দীর্ঘ লাইন ও অ্যাপয়েন্টমেন্টের বিড়ম্বনা

শহুরে হাসপাতালের অভিজ্ঞতা মানেই হচ্ছে দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর। সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকেটের লাইন থেকে শুরু করে ডাক্তার দেখানো পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও পরিচিতি বা রেফারেন্স ছাড়া ভালো ডাক্তার দেখানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় দেখা যায়, জরুরি প্রয়োজনেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যায় না, বা ডাক্তারকে দেখানোর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয়। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে রোগীর শারীরিক ও মানসিক কষ্ট আরও বেড়ে যায়। আমার নিজের একাধিকবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে যেখানে অসুস্থ অবস্থায় কয়েক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর ডাক্তার দেখানোর সুযোগ মিলেছে।

ব্যয়ের বোঝা ও সহজলভ্যতা

শহরে ভালো চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ করতে হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রায়শই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ডাক্তার ভিজিট, ল্যাব টেস্ট, ঔষধপত্র এবং হাসপাতালের চার্জ – সব মিলিয়ে একটি বড় অঙ্কের টাকা গুনতে হয়। বিশেষ করে জটিল রোগ বা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই খরচ সাধারণ পরিবারগুলোর জন্য বিশাল বোঝা হয়ে আসে। অনেক পরিবারকে চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে জমিজমা বিক্রি করতে বা ধারদেনা করতে দেখা যায়, যা তাদের অর্থনৈতিকভাবে আরও দুর্বল করে তোলে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বা সরকারি ভর্তুকির মতো উদ্যোগগুলো আরও বেশি প্রসারিত হওয়া উচিত।

Advertisement

ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ: ঘরে বসে সমাধান

আশার কথা হলো, এই ডিজিটাল যুগে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার অনেক কিছুই এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। ইন্টারনেট আর স্মার্টফোনকে কাজে লাগিয়ে আমরা এখন ঘরে বসেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারছি, ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট দেখতে পাচ্ছি, এমনকি ঔষধও অর্ডার করতে পারছি। এই ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা আমাদের জন্য একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় আমরা দেখেছি, টেলিমেডিসিন কতটা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। গ্রামের মানুষ যারা শহরে এসে চিকিৎসা নিতে পারেন না, তাদের জন্য এটি যেন এক আশীর্বাদ। আমার মনে আছে, আমার এক চাচাতো ভাই বিদেশে থাকে, সে তার মার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়মিত খোঁজখবর এখন ভিডিও কলের মাধ্যমে একজন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নেয়, যা আগে প্রায় অসম্ভব ছিল। এতে সময় বাঁচে, অর্থও বাঁচে এবং যাতায়াতের ভোগান্তিও কমে। সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোও এখন এই খাতে বেশ বিনিয়োগ করছে। বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এখন অনেক ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাচ্ছে, যা আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। তবে এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে আরও বেশি মানুষকে সচেতন করা এবং তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করা প্রয়োজন।

টেলিমেডিসিন: সময় ও অর্থের সাশ্রয়

টেলিমেডিসিন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ এখন খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে মানুষ একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারে, রোগের লক্ষণ বর্ণনা করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পেতে পারে। এতে করে রোগীর কষ্ট করে হাসপাতালে যাওয়া বা দূরদূরান্ত থেকে শহরে আসার প্রয়োজন হয় না। বিশেষ করে বয়স্ক ব্যক্তি বা যাদের যাতায়াতের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এই সেবা খুবই উপকারী। আমার এক বন্ধুর মা ঢাকার বাইরে থাকেন, তিনি এখন তার নিয়মিত চেকআপের জন্য টেলিমেডিসিনের সাহায্য নেন, এতে তার অনেক সময় ও টাকা বেঁচে যায়।

অনলাইন ল্যাব টেস্ট ও ঔষধ সরবরাহ

শুধু ডাক্তার দেখানোই নয়, এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ল্যাব টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ এবং রিপোর্টও অনলাইনে পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক অ্যাপের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেই ঔষধ অর্ডার করা যায়, যা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যায়। এই ধরনের সেবাগুলো বিশেষ করে জরুরি পরিস্থিতিতে বা বয়স্কদের জন্য খুবই সুবিধাজনক। অসুস্থ অবস্থায় ঔষধ কিনতে দোকানে না গিয়ে ঘরে বসেই তা পাওয়ার সুবিধা, এটা সত্যিই অসাধারণ। এই ডিজিটাল সুবিধাগুলো আমাদের স্বাস্থ্যসেবাকে আরও গতিশীল এবং সহজলভ্য করে তুলেছে।

স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট: আমাদের ভাবার বিষয়

আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হলো যোগ্য ও প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান – সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তীব্র সংকট। সরকারি হাসপাতালগুলোতে একজন ডাক্তারের উপর অনেক বেশি রোগীর চাপ থাকে, যার ফলে তিনি প্রতিটি রোগীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। নার্সদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। একদিকে যেমন নতুন করে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি হচ্ছে না প্রয়োজনের তুলনায়, অন্যদিকে যারা আছেন তারাও ভালো সুযোগের সন্ধানে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছেন। এই জনবল সংকটের কারণে স্বাস্থ্যসেবার মান ধরে রাখাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। একবার আমার এক পরিচিত ব্যক্তি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, কিন্তু দেখা গেল পর্যাপ্ত নার্স না থাকায় অনেক ছোটখাটো সেবার জন্যও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছিল। এটা সত্যিই দুঃখজনক। এই সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নতুন মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, প্রশিক্ষণের মান উন্নত করা এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আরও আকর্ষণীয় কর্মপরিবেশ তৈরি করা জরুরি। এছাড়া, গ্রামের দিকে যারা কাজ করতে চান, তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত

বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় ডাক্তার ও নার্সের অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে অনেক কম। এর ফলে বিদ্যমান স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর কাজের অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। একজন ডাক্তারকে যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী দেখতে হয়, সেখানে প্রতিটি রোগীর প্রতি সঠিকভাবে মনোযোগ দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। নার্সিং পেশাতেও একই ধরনের চাপ দেখা যায়। এই ভারসাম্যহীনতা দূর করতে হলে দ্রুত নতুন জনবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

দক্ষ টেকনিশিয়ান ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব

শুধুমাত্র ডাক্তার বা নার্সই নয়, প্যাথলজি ল্যাব, রেডিওলজি বা অন্যান্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরও ব্যাপক অভাব রয়েছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এই দক্ষ জনবল অপরিহার্য। এদের অভাবে অনেক সময় দামি যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় না বা রিপোর্টের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্য খাতের সাথে যুক্ত করে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

Advertisement

ব্যক্তিগত ও সরকারি উদ্যোগ: এক সমন্বিত প্রয়াস

আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে শুধু সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা সম্ভব নয়, এখানে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যেখানে কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে, সেখানে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো আধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে। যখন এই দুই খাত একসাথে কাজ করবে, তখনই আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার চেহারা পাল্টে যাবে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে অনেক নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব, যা সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে। আমার মনে পড়ে, একবার একটি সরকারি হাসপাতালে কিছু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব ছিল, কিন্তু একটি বেসরকারি সংস্থা অনুদানের মাধ্যমে সেই যন্ত্রপাতিগুলো সরবরাহ করেছিল, যার ফলে অনেক রোগীর জীবন বেঁচে গিয়েছিল। এই ধরনের উদ্যোগগুলো খুবই প্রশংসনীয়। এই সমন্বিত প্রয়াস কেবল স্বাস্থ্যসেবার মানই বাড়াবে না, বরং স্বাস্থ্য খাতে নতুন উদ্ভাবন এবং গবেষণারও পথ খুলে দেবে। উভয় খাতের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সুষ্ঠু সমন্বয় আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের সম্ভাবনা

সরকার এবং বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিধি বাড়ানো সম্ভব। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) এর মাধ্যমে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ, বিদ্যমান হাসপাতালগুলোর আধুনিকীকরণ, চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের মতো কাজগুলো করা যেতে পারে। এতে করে সরকারি খাতের উপর চাপ কমবে এবং বেসরকারি খাতের দক্ষতা ও সম্পদের সদ্ব্যবহার করা যাবে। এই ধরনের অংশীদারিত্ব গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

উভয় খাতের সুবিধা গ্রহণ

방글라데시의 의료 서비스 - **Prompt:** A brightly lit, contemporary scene showing a young Bangladeshi woman, elegantly dressed ...

সরকারি হাসপাতালগুলো যেখানে স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালগুলো দ্রুততর এবং অত্যাধুনিক সেবা প্রদান করে থাকে। উভয় খাতের এই সুবিধাগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। যেমন, সরকারি রেফারেলের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালে কম খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, অথবা বেসরকারি হাসপাতালগুলো নির্দিষ্ট কিছু সেবা সরকারি রোগীদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে প্রদান করতে পারে। এই ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা মানুষের জন্য আরও ভালো চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করবে।

ঔষধের সহজলভ্যতা ও মান নিয়ন্ত্রণ: একটি জরুরি প্রশ্ন

স্বাস্থ্যসেবার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মানসম্মত ঔষধের সহজলভ্যতা। আমাদের দেশে ঔষধ উৎপাদন শিল্পের অগ্রগতি প্রশংসনীয় হলেও, এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সব ধরনের ঔষধ সব সময় পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় দেখা যায়, কিছু অসাধু চক্র নকল বা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ বিক্রি করে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি। একবার আমার এক বন্ধু ভুল করে একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, পরে জানতে পারলাম ঔষধটি নকল ছিল। এই ঘটনাটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিল। ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা আমাদের সবার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের উচিত ঔষধ প্রশাসনের নজরদারি আরও জোরদার করা এবং নিয়মিত বাজার পর্যবেক্ষণ করা, যাতে নকল ঔষধের বিস্তার রোধ করা যায়। এছাড়া, মানুষের মধ্যে ঔষধ কেনার সময় মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ যাচাই করার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। ঔষধের সঠিক ব্যবহার এবং সংরক্ষণের বিষয়েও মানুষকে অবহিত করা উচিত। সঠিক ঔষধ, সঠিক সময়ে, সঠিক মূল্যে পাওয়াটা প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।

নকল ঔষধের বিস্তার রোধ

নকল এবং ভেজাল ঔষধের বাজার দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি মারাত্মক ঝুঁকি। এই ধরনের ঔষধ খেলে রোগ সারে না বরং আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচিত নিয়মিত বাজার অভিযান পরিচালনা করা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। পাশাপাশি, সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা অপরিচিত উৎস থেকে ঔষধ কেনা থেকে বিরত থাকেন এবং ঔষধ কেনার সময় প্যাকেজিং ও মেয়াদ উত্তীর্ণ তারিখ ভালোভাবে যাচাই করে নেন।

প্রয়োজনীয় ঔষধের সরবরাহ চেইন

অনেক সময় দেখা যায়, জীবন রক্ষাকারী বা জরুরি কিছু ঔষধ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সহজে পাওয়া যায় না। ঔষধের সরবরাহ চেইন উন্নত করা এবং প্রতিটি এলাকার ঔষধের দোকানে প্রয়োজনীয় ঔষধের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বা জরুরি পরিস্থিতিতে ঔষধের সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়ে ঔষধ কোম্পানি, ডিস্ট্রিবিউটর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

Advertisement

প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্ব: সুস্থ থাকার সহজ উপায়

আমরা সাধারণত অসুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসা নিতে যাই, কিন্তু রোগ যাতে না হয় সেই বিষয়ে যদি আমরা আগে থেকেই সচেতন থাকি, তাহলে অনেক রোগ থেকেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা মানে হলো, রোগ হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন – নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং ব্যায়াম করা। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো আমাদের সুস্থ জীবন যাপনে অনেক সাহায্য করে। আমার দাদী সবসময় বলতেন, “সাবধানে চললে রোগ কাছে ঘেঁষে না।” এই কথাটা কতটা সত্যি, তা আমি এখন বুঝি। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো অনেক জীবনঘাতী রোগ নিয়মিত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের উচিত প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার উপর আরও বেশি জোর দেওয়া এবং মানুষকে এই বিষয়ে শিক্ষিত করা। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায়েও এই বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালানো উচিত। এর ফলে শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই শক্তিশালী হবে এবং চিকিৎসার জন্য খরচও অনেক কমে যাবে।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস

একটি সুস্থ জীবনযাপনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। অস্বাস্থ্যকর খাবার এবং অলস জীবনযাপন ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আমি নিজে দেখেছি, যখন থেকে আমি সকালে হাঁটা শুরু করেছি এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমিয়েছি, তখন থেকে আমার শরীর অনেক সতেজ থাকে। সুস্থ জীবনযাপন মানেই সুস্থ শরীর এবং সুস্থ মন।

টিকাকরণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্প

বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে টিকাকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের জন্য নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচি যেমন অপরিহার্য, তেমনি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও কিছু টিকা প্রয়োজন। এছাড়া, নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্পের আয়োজন করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। এই ক্যাম্পগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে অনেক রোগ শনাক্ত করা সম্ভব হয়, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করে। আমার এলাকার স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য ক্যাম্প করে, যার ফলে অনেকেই উপকৃত হন।

স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ: অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর মন্ত্র

অনেকে মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ মানে কেবল খরচ বাড়ানো। কিন্তু আমি মনে করি, এটা একটা বিনিয়োগ, যা দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, একটি সুস্থ জাতিই একটি কর্মঠ জাতি। যখন দেশের মানুষ সুস্থ থাকে, তখন তারা দেশের উন্নয়নে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে। রোগাক্রান্ত মানুষ কাজ করতে পারে না, তাদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়, এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, যেমন – ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, ঔষধ কোম্পানি এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। এতে করে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পায় এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। একবার অর্থনীতিবিদদের একটি আলোচনায় শুনেছিলাম, কোন দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করা প্রতিটি টাকা দেশের মোট উৎপাদনশীলতায় প্রায় পাঁচ গুণ পর্যন্ত প্রভাব ফেলে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর! তাই সরকারের উচিত স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো এবং বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা। সুস্থ মানুষই সমৃদ্ধ দেশের ভিত্তি।

বিনিয়োগ ক্ষেত্র সুবিধা অর্থনৈতিক প্রভাব
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ছোট রোগ প্রতিরোধ, প্রাথমিক চিকিৎসা বৃহৎ রোগের চিকিৎসা ব্যয় হ্রাস, কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
ডিজিটাল স্বাস্থ্য দূর থেকে পরামর্শ, সময় ও অর্থ সাশ্রয় যাতায়াত ব্যয় হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা
স্বাস্থ্য শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা রোগের হার হ্রাস, সুস্থ জনশক্তি তৈরি
গবেষণা ও উন্নয়ন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, ঔষধ আবিষ্কার চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, আন্তর্জাতিক খ্যাতি

স্বাস্থ্য বিনিয়োগ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন

স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ সরাসরি মানবসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করে। যখন মানুষ সুস্থ থাকে, তখন তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, কাজে যোগ দিতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে। অসুস্থতা মানবসম্পদের একটি বড় অংশকে অকার্যকর করে তোলে। তাই স্বাস্থ্য খাতে সুচিন্তিত বিনিয়োগ করলে দেশের সার্বিক মানবসম্পদের গুণগত মান বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

চিকিৎসা পর্যটনের সম্ভাবনা

মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন হলে আমাদের দেশ চিকিৎসা পর্যটনের একটি কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে। পাশের দেশগুলো থেকে অনেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশে আসতে পারেন, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হবে। এর জন্য অবশ্য আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল তৈরি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই ধরনের উদ্যোগগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

Advertisement


글을মাচিয়ে

বন্ধুরা, আজকের এই দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা দেশের স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। গ্রামীণ মানুষের কষ্ট থেকে শুরু করে শহুরে চিকিৎসার চাপ, ডিজিটাল সুবিধার সম্ভাবনা থেকে শুরু করে জনবল সংকট – সব মিলিয়ে একটি জটিল চিত্র আমাদের সামনে এসেছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সম্মিলিত সচেতনতা আর সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারব। মনে রাখবেন, সুস্থ জাতিই একটি সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী দেশের ভিত্তি। আমরা সবাই যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে একটু সচেতন হই, তাহলে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারি।

আল্লাদুমেও সিলমো ইন্নো জানবো

আজকের এই আলোচনা থেকে আশা করি আপনারা স্বাস্থ্যসেবার কিছু জরুরি দিক সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। কিছু ছোট ছোট বিষয় মনে রাখলে আমরা নিজেরা এবং আমাদের পরিবারকে সুস্থ রাখতে পারি। এখানে কিছু টিপস থাকছে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে কাজে দেবে:

১. আপনার এলাকার স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে জানুন: নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কী কী সেবা পাওয়া যায়, কখন ডাক্তার বসেন, তা জেনে রাখুন। এতে জরুরি প্রয়োজনে কোথায় যেতে হবে বা কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে, সেই বিষয়ে আপনার একটি স্পষ্ট ধারণা থাকবে এবং সময় মতো সঠিক সেবা নিতে পারবেন। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার মানুষদের জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কারণ অনেক সময় তারা হাতের কাছে কী সুবিধা আছে সেটাই জানেন না, ফলে অযথা ভোগান্তির শিকার হন।

২. ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নিন: এখনকার যুগে টেলিমেডিসিন, অনলাইন ডাক্তার পরামর্শ বা ঘরে বসে ল্যাব টেস্টের নমুনা সংগ্রহের মতো অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। অসুস্থ অবস্থায় শহরে যাতায়াতের ঝক্কি না পোহিয়ে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ঘরে বসেই অভিজ্ঞ ডাক্তারের সাথে কথা বলতে পারেন। আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলে, এটা কতটা সময় এবং অর্থের সাশ্রয় করে। এমনকি ঔষধও অনেকে এখন অনলাইনেই অর্ডার করছেন, যা বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য খুবই উপকারী একটি ব্যবস্থা।

৩. ঔষধের বিষয়ে সতর্ক থাকুন: যেকোনো ঔষধ কেনার আগে তার মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, প্রস্তুতকারক এবং প্যাকেজিং ভালোভাবে দেখে নিন। পরিচিত ফার্মেসি থেকে ঔষধ কিনুন এবং কোনো সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নকল বা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। একবার আমার একজন পরিচিত ব্যক্তি ভুল ঔষধ খেয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তাই এই বিষয়ে কোনো রকম আপস করা ঠিক নয় এবং সর্বদা সতর্ক থাকা উচিত।

৪. প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যের উপর জোর দিন: রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে রোগ যাতে না হয়, তার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়মিত হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম এবং হালকা ব্যায়াম – এই অভ্যাসগুলো আমাদের অনেক রোগ থেকে দূরে রাখে। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগগুলোকেও প্রাথমিক পর্যায়ে জীবনযাপন পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সুস্থ থাকতে এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো খুবই শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদী সুফল বয়ে আনে।

৫. স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে যুক্ত থাকুন: আপনার এলাকার স্বাস্থ্যকর্মী বা স্বাস্থ্য স্বেচ্ছাসেবকরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্যাম্প, টিকাদান কর্মসূচি বা স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক আলোচনার আয়োজন করে থাকেন। এই প্রোগ্রামগুলোতে অংশ নিয়ে আপনি নতুন স্বাস্থ্য তথ্য জানতে পারবেন এবং আপনার পরিবারের স্বাস্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকলে তাদের পরামর্শ নিতে পারবেন। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলে জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা আরও শক্তিশালী হয়।

Advertisement

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো

আজকের এই দীর্ঘ আলোচনার মূল বিষয়গুলো যদি সংক্ষেপে বলতে হয়, তবে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রতিটি স্তরেই উন্নতি প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে ডাক্তার ও ঔষধের অভাব, সচেতনতার ঘাটতি – এই সমস্যাগুলো যেমন প্রকট, তেমনি শহরাঞ্চলে ভিড় আর চিকিৎসা ব্যয়ের চাপও কম নয়। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, যা দূরদূরান্তের মানুষের কাছে মানসম্মত সেবা পৌঁছে দিতে পারে এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এর জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যখাতে পর্যাপ্ত জনবল বৃদ্ধি, উন্নত অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রয়াস, যা ছাড়া দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব নয়। ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার উপর জোর দেওয়াও অত্যাবশ্যক, কারণ সুস্থ জীবন ধারণের জন্য এই দিকগুলো মৌলিক গুরুত্ব বহন করে। সর্বশেষে, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগকে একটি জাতীয় বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একটি সুস্থ, কর্মক্ষম জাতি গঠনে সাহায্য করবে। ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সম্মিলিত উদ্যোগই পারে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: আমাদের দেশের শহর আর গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার এত বড় ফারাক কেন, আর সরকার বা আমরা কী করলে এই সমস্যাটা কিছুটা হলেও কমতে পারে?

উ: সত্যি কথা বলতে কী, এই প্রশ্নটা আমার মনেও অনেকবার এসেছে। শহর আর গ্রামের স্বাস্থ্যসেবার এই বৈষম্যটা আসলে অনেক পুরনো একটা সমস্যা। আমি নিজে দেখেছি, গ্রামের সহজ-সরল মানুষগুলো সামান্য অসুখেও ঠিকমতো চিকিৎসা পান না। শহরের হাসপাতালগুলোতে যেখানে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম আর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আছেন, সেখানে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো অনেক সময় জনবল আর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ধুঁকছে। এর প্রধান কারণ হলো, স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বণ্টন, অবকাঠামো আর প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব। ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে ডাক্তার যেতে চান না, কারণ সেখানে সুযোগ-সুবিধা কম। চিকিৎসা খরচও একটা বড় ব্যাপার। শহরের প্রাইভেট হাসপাতালে একবার গেলে যে খরচ হয়, সেটা গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই যে আমার এক আত্মীয়কে সামান্য অসুখের জন্য রাতারাতি ঢাকা নিয়ে যেতে হয়েছিল, সেটা কিন্তু নিছকই এক উদাহরণ নয়, এটা বহু পরিবারের প্রতিদিনের বাস্তবতা।তবে হ্যাঁ, আশার কথা হলো, সরকার এখন কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। এতে গ্রামের মানুষ হাতের কাছেই প্রাথমিক চিকিৎসা পাচ্ছেন। কিন্তু শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা যথেষ্ট নয়, রেফারেল সিস্টেমটাকেও আরও কার্যকর করতে হবে, যাতে গুরুতর রোগীদের দ্রুত শহরের বড় হাসপাতালে পাঠানো যায়। বেসরকারি খাতকেও আরও বেশি করে গ্রামের দিকে নজর দিতে হবে, বিশেষ করে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে। আমার মনে হয়, স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করা, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া আর প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো – যেমন মোবাইল স্বাস্থ্যসেবা – এগুলো এই ফারাক কমাতে অনেকটাই সাহায্য করবে। সুস্থ জাতি গঠনে সবার সুস্থ থাকাটা জরুরি, সেটা শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক না কেন।

প্র: ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবনে ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন আনছে, আর এর মাধ্যমে আমরা আর কী কী সুবিধা পেতে পারি?

উ: ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বলতে গেলে, আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এটা আমাদের জীবনকে সত্যিই অনেক সহজ করে তুলেছে। আগে যেখানে ডাক্তারের সিরিয়াল পেতে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হতো, বা সামান্য একটা রিপোর্ট সংগ্রহ করতে ল্যাবে একাধিকবার ছুটতে হতো, এখন স্মার্টফোনের মাধ্যমেই ঘরে বসে অনেক কিছু করা যাচ্ছে। যেমন, আমি নিজেই দেখেছি, গ্রামের অনেক মানুষ এখন মোবাইলে ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছেন, যা তাদের শহরের দূরে না গিয়েও চিকিৎসা পেতে সাহায্য করছে। বিশেষ করে, টেলিমেডিসিন সার্ভিসগুলো এই ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা রাখছে। অসুস্থ অবস্থায় বাইরে যাওয়ার ঝামেলা কমিয়েছে, আবার যাতায়াতের খরচও বাঁচিয়ে দিচ্ছে। ল্যাব টেস্টের রিপোর্টগুলোও এখন অনলাইনে দেখা যাচ্ছে, যা সময় বাঁচাচ্ছে এবং ভোগান্তি কমাচ্ছে।এটা শুধু পরামর্শ বা রিপোর্ট দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। ভবিষ্যতে আমরা আরও অনেক সুবিধা পাবো বলে আমার বিশ্বাস। যেমন, এখন আমরা যেমন মোবাইল ব্যাংকিং করি, তেমনি হয়তো স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম বা চিকিৎসার বিলও মোবাইলের মাধ্যমে সহজে পরিশোধ করতে পারব। স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনগুলোও ডিজিটালি আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে। আমার মনে হয়, একটা সেন্ট্রাল হেলথ রেকর্ড সিস্টেম তৈরি হলে, যেখানে আমাদের চিকিৎসার সব তথ্য থাকবে, তাহলে এক ডাক্তার থেকে অন্য ডাক্তারের কাছে গেলে নতুন করে সব তথ্য দিতে হবে না। এতে ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনাও কমবে। তবে হ্যাঁ, এর জন্য ইন্টারনেট সংযোগের সহজলভ্যতা আর ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানোটা খুব জরুরি। এই পরিবর্তনের সঙ্গে আমরা যত দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারব, ততই আমাদের স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য ও কার্যকর হবে।

প্র: দেশের স্বাস্থ্য খাতে যে জনবল সংকট আর দুর্নীতির কথা আমরা প্রায়ই শুনি, এগুলো আসলে কত বড় সমস্যা, আর এগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

উ: জনবল সংকট আর দুর্নীতি – এই দুটো সমস্যা আমাদের দেশের স্বাস্থ্য খাতের গভীর ক্ষত। আমি মনে করি, এগুলো শুধু সমস্যা নয়, বরং আমাদের স্বাস্থ্যসেবার অগ্রগতিতে বড় বাধা। একবার আমার এক পরিচিত ব্যক্তি একটি সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখেন যে, ডাক্তার আছেন ঠিকই, কিন্তু নার্সের সংখ্যা এত কম যে, রোগীরা ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। এই যে ডাক্তার বা নার্সের পর্যাপ্ত সংখ্যা না থাকা, আবার যারা আছেন, তাদেরও শহরের বাইরে যেতে অনীহা – এটা জনবল সংকটের একটা বড় দিক। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ভালো ডাক্তার আর বিশেষজ্ঞের অভাব খুবই প্রকট।আর দুর্নীতির কথা কী বলব!
এই খাতের কিছু লোকজনের জন্য অনেক সময় সাধারণ রোগীরা প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হন। সরঞ্জাম কেনাকাটা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়, এমনকি রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায়ের ঘটনাও শোনা যায়। এই দুর্নীতি শুধু আর্থিক ক্ষতিই করে না, বরং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেয়।এই সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন। প্রথমত, স্বাস্থ্য খাতে মেধাবী ও সৎ জনবল তৈরি করতে হবে এবং তাদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে। যারা গ্রামে কাজ করবেন, তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্য খাতের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনিয়মগুলো চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করতে হবে। যেমন, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম চালু করা বা অনলাইন অভিযোগ বক্সের মতো ব্যবস্থা। আমার মনে হয়, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা গেলেই আমাদের স্বাস্থ্যসেবার চেহারাটা truly পাল্টে যাবে এবং দেশের মানুষ সত্যিই সুস্থ ও উন্নত জীবন পাবে। এতে আমাদের অর্থনীতিও আরও গতি পাবে, কী বলেন?

📚 তথ্যসূত্র