বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনের অজানা ইতিহাস: আপনার ধারণা বদলে দেবে

webmaster

방글라데시 독립 역사 - **Prompt for Language Movement (1952):**
    "A vibrant, realistic image capturing a scene from the ...

আহা, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশ! যখনই স্বাধীনতার কথা ভাবি, মনটা যেন এক অদ্ভুত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ, অদম্য সাহস আর বুক ভরা স্বপ্নের ফল এই স্বাধীন দেশ। কত সংগ্রাম, কত রক্ত, কত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এই লাল-সবুজের পতাকা। এটা শুধু একটা ইতিহাস নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের গল্প, আমাদের শিকড়ের কথা। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এই অধ্যায় গভীর দাগ কেটে আছে। ভাবুন তো, সেই সময়টা কেমন ছিল, যখন মুক্তির ডাক ছিল সবার মুখে মুখে?

আসুন, আমাদের এই মহান ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় ডুব দিয়ে আরও গভীরভাবে জেনে নিই সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলোকে!

আহা, আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি, বাংলাদেশ! যখনই স্বাধীনতার কথা ভাবি, মনটা যেন এক অদ্ভুত শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভরে ওঠে। আমাদের পূর্বপুরুষদের আত্মত্যাগ, অদম্য সাহস আর বুক ভরা স্বপ্নের ফল এই স্বাধীন দেশ। কত সংগ্রাম, কত রক্ত, কত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে আমরা পেয়েছি এই লাল-সবুজের পতাকা। এটা শুধু একটা ইতিহাস নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের গল্প, আমাদের শিকড়ের কথা। প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে এই অধ্যায় গভীর দাগ কেটে আছে। ভাবুন তো, সেই সময়টা কেমন ছিল, যখন মুক্তির ডাক ছিল সবার মুখে মুখে?

আসুন, আমাদের এই মহান ইতিহাসের প্রতিটি পাতায় ডুব দিয়ে আরও গভীরভাবে জেনে নিই সেই গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়গুলোকে!

ভাষা শহীদের আত্মত্যাগ: আমাদের শিকড়ের সুর

방글라데시 독립 역사 - **Prompt for Language Movement (1952):**
    "A vibrant, realistic image capturing a scene from the ...

আহা, ভাষা আন্দোলনের কথা ভাবলে আজও আমার মনটা কেমন যেন আনচান করে ওঠে! ১৯৫২ সালের সেই উত্তাল দিনগুলো, যখন মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষায় বাংলার তরুণ-তরুণীরা বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সে এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যখন আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, তখন একুশের দামাল ছেলেরা হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল। ২১শে ফেব্রুয়ারির সেই রক্তঝরা দিনে সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের মতো নামগুলো শুধু কয়েকটি নাম নয়, তারা হয়ে উঠেছিলেন আমাদের জাতীয়তার প্রথম বীজ, আমাদের স্বাধীনতার প্রথম সিঁড়ি। তাদের আত্মত্যাগই দেখিয়েছিল, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্য বাঙালি কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এই ঘটনা শুধু একটি ভাষার জন্য যুদ্ধ ছিল না, এটি ছিল আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর আত্মপরিচয় রক্ষার এক বিশাল সংগ্রাম। আমার মনে হয়, আমাদের প্রজন্মের প্রতিটি মানুষের এই ইতিহাসকে গভীরভাবে উপলব্ধি করা উচিত, কারণ এর মাধ্যমেই আমরা আমাদের শেকড়ের সন্ধান পাই। সেই স্মৃতিগুলো আজও আমাদের রক্তে মিশে আছে, আমাদের পথচলার অনুপ্রেরণা হয়ে। ভাষা আন্দোলন ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম সুসংগঠিত প্রতিরোধ, যা বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তি স্থাপন করে। এটি জাতিগত পরিচয়ের প্রথম প্রকাশ ছিল, যেখানে মানুষ ধর্মীয় গোঁড়ামির ঊর্ধ্বে উঠে ভাষার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলে।

ঐতিহ্যের প্রথম বীজবপন

আমার মনে হয়, ভাষা আন্দোলনই ছিল আসলে আমাদের বাঙালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের প্রথম সুস্পষ্ট ঘোষণা। যখন ভাষার ওপর আঘাত আসে, তখন একটি জাতির সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ডই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। কিন্তু আমাদের পূর্বপুরুষরা তা হতে দেননি। তারা বুঝেছিলেন, ভাষার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের সাহিত্য, গান, কবিতা, নাটক – সবকিছু। এই যে আজ আমরা নির্দ্বিধায় বাংলায় কথা বলতে পারছি, লিখতে পারছি, আমাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি, এর পেছনে রয়েছে সেইসব সাহসী প্রাণের অবিশ্বাস্য ত্যাগ। ভাবুন তো, সেদিন যদি তারা পিছু হটতেন, তাহলে আমাদের পরিচয়টা হয়তো আজ অন্যরকম হতো! ভাষার জন্য রক্ত দেওয়ার এই বিরল ইতিহাস বিশ্বে আর কোথাও নেই, আর এটা আমার বুকে এক গর্বের সুতো বুনে দেয়। এই আত্মত্যাগ শুধু বাঙালির জন্য নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং অধিকারের এক অনন্য প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি আসে, আর আমরা নতুন করে প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সবসময় আগলে রাখার। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করে।

প্রাণের ভাষা, প্রাণের দাবি

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভাষা দিবস এলেই কেমন যেন একটা বিষাদের ছায়া নেমে আসে, কিন্তু একই সাথে এক গভীর আত্মমর্যাদার অনুভূতিও জাগে। সেই সময়ে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল একটাই—মাতৃভাষার অধিকার। যখন দেখি বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে, তখন মনে হয় আমাদের পূর্বপুরুষদের লড়াই বৃথা যায়নি। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ, মেডিকেল কলেজের হোস্টেল গেট, সবখানে ছিল এক অবিচল প্রতিজ্ঞা। পুলিশ যখন গুলি চালায়, তখন তারা জানতেন তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে, তবুও তারা দমে যাননি। এই ঘটনাই প্রমাণ করে, নিজেদের অধিকারের জন্য, বিশেষ করে ভাষার মতো মৌলিক একটি বিষয়ের জন্য, বাঙালি কতটা অদম্য হতে পারে। এই আন্দোলনই পরবর্তীতে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথ খুলে দিয়েছিল। এটা শুধু কিছু স্লোগান আর বিক্ষোভ ছিল না, এটা ছিল পরাধীনতার বিরুদ্ধে প্রথম বড়সড় আঘাত, যা ধীরে ধীরে পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। ভাষা আন্দোলনই সকল শ্রেণির বাঙালিকে তাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পূরণের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করতে প্রধান সহায়কের ভূমিকা গ্রহণ করতে পেরেছিল।

স্বাধীনতার প্রথম স্বপ্নবীজ: ছয় দফার আন্দোলন

ভাষা আন্দোলনের পর বাঙালি জাতি যখন কিছুটা থিতু হয়েছিল, তখনই এল আরেক ঐতিহাসিক মাইলফলক – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে যখন বঙ্গবন্ধু এই ছয় দফা ঘোষণা করলেন, তখন তা যেন ঘুমন্ত বাঙালি জাতির মনে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করলো। এই দফাগুলো ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসনের দাবি, যা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে আমাদের শোষণমুক্তির পথ খুলে দিতে পারতো। আমার মনে আছে, আমার দাদা-দাদীরা বলতেন, ছয় দফা ঘোষণার পর থেকেই বাঙালির মুখে মুখে কেবল স্বাধীনতার কথা। এটি বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা হিসেবে পরিচিত। এটা শুধু কিছু রাজনৈতিক দাবি ছিল না, এটা ছিল আমাদের আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধারের এক অদম্য আকাঙ্ক্ষা, পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির এক সুস্পষ্ট রূপরেখা। এই ছয় দফার আলোকেই পরবর্তীতে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীজ পোঁতা হয়। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।

জাতির স্বপ্নযাত্রা: শেখ মুজিবের ছয় দফা

আমার কাছে ছয় দফা মানে শুধু কয়েকটি লিখিত প্রস্তাবনা নয়, এটি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ, একটি জাতির নতুন স্বপ্নযাত্রার দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে এই দফাগুলো সাজিয়েছিলেন, যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া শাসন থেকে বেরিয়ে আসার প্রতিটি ক্ষেত্রকে তুলে ধরা হয়েছিল। মুদ্রা, বৈদেশিক বাণিজ্য, কর ধার্য, আঞ্চলিক সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী গঠন—সবকিছুতেই পূর্ব পাকিস্তানের নিজস্ব অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছিল। এই দাবিগুলো এতটাই যুগোপযোগী ছিল যে, খুব দ্রুতই তা আপামর জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আমি যখন এই বিষয়গুলো পড়ি, তখন ভাবি, বঙ্গবন্ধু সেদিন কতটা দূরদর্শী ছিলেন! তিনি জানতেন, এই দফাগুলো একদিন স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করবে। আমার মনে হয়, যেকোনো জাতির জন্য একজন দূরদর্শী নেতার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ছয় দফার মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারি। ছয় দফা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়ন, নির্যাতন আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রথম আনুষ্ঠানিক বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।

স্বায়ত্তশাসনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা

ছয় দফার আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক মহলে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি পৌঁছে গিয়েছিল সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে। বাংলার কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, সবাই ছয় দফাকে নিজেদের মুক্তির পথ হিসেবে দেখতে শুরু করেন। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা যখন ছয় দফাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করলো, তখন বাঙালি আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর পক্ষে দাঁড়ায়। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় বাবা-মার মুখে শুনতাম, কীভাবে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছয় দফার সমর্থনে মিছিলে অংশ নিত, কীভাবে প্রতিটি গ্রামে গঞ্জে এই দাবি নিয়ে আলোচনা হতো। এই আকাঙ্ক্ষা এতটাই তীব্র ছিল যে, কোনো দমন-পীড়নই বাঙালিকে দমাতে পারেনি। বরং যত বেশি দমন-পীড়ন হয়েছে, তত বেশি বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে উঠেছে। এটা আমাদের প্রমাণ করে দেয়, কোনো জাতিকে যদি তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে তাদের মধ্যে কতটা প্রবলভাবে প্রতিরোধের আগুন জ্বলে উঠতে পারে। ছয় দফার কর্মসূচির প্রচার ও প্রসারের ফলে এদেশের মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে।

Advertisement

একাত্তরের বজ্রকণ্ঠ: মুক্তির ডাক

একাত্তর! এই শব্দটা শুনলেই আমার মনে এক অন্যরকম অনুভূতির ঢেউ খেলে যায়। বিশেষ করে ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক দিনটি, যা আজও আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখ লাখ মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন তার কালজয়ী ভাষণটি দিলেন, তখন তা যেন প্রতিটি বাঙালির মনে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম!”—এই কয়েকটি বাক্য ছিল শুধু কিছু কথা নয়, এটি ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার মন্ত্র, স্বাধীন বাংলাদেশের বীজমন্ত্র। আমার মনে হয়, সেই দিন যারা সরাসরি এই ভাষণ শুনেছিলেন, তাদের অনুভূতিটা কতটা তীব্র ছিল! এই ভাষণ শুধু একটি বক্তৃতা ছিল না, এটি ছিল একটি জাতির সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ, যা এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছিল। এই ভাষণ আজও আমাদের প্রেরণা যোগায়, যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে শেখায়।

বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় ৭ই মার্চের ভাষণ

আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ৭ই মার্চের ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত। এই ভাষণ কোনো লিখিত স্ক্রিপ্ট থেকে দেওয়া হয়নি, এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের গভীর থেকে আসা স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ। এই ভাষণের প্রতিটি শব্দে ছিল দূরদর্শিতা, প্রজ্ঞা এবং একটি জাতির প্রতি অগাধ ভালোবাসা। তিনি একদিকে যেমন আলোচনার পথ খোলা রেখেছিলেন, তেমনি অন্যদিকে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। “তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে”—এই নির্দেশনা ছিল প্রতিটি বাঙালির জন্য এক অমোঘ আদেশ। আমি যখন এই ভাষণের ভিডিও দেখি, তখন আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। লাখ লাখ মানুষের সেই জনসমুদ্র আর বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় কণ্ঠস্বর—সে এক অভাবনীয় দৃশ্য! আমার কাছে এই ভাষণ কেবল ঐতিহাসিক নথি নয়, এটি বাঙালির আত্মপরিচয়ের এক চিরন্তন দলিল। এই ভাষণের মাধ্যমেই তিনি এক মহাকাব্য রচনা করেছিলেন এবং বিশ্বজুড়ে ‘রাজনীতির কবি’ (Poet of Politics) হিসেবে আখ্যায়িত হন।

মুক্তির মশাল হাতে এগিয়ে চলা

৭ই মার্চের ভাষণের পর যেন পুরো জাতি মুক্তির মশাল হাতে এগিয়ে চলার শক্তি পেল। গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে শহরের বুদ্ধিজীবী—সবাই বুঝতে পারলেন, এবার আর পিছু হটার সুযোগ নেই। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা যখন ২৫শে মার্চের কালো রাতে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো, তখন বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা টেলিগ্রামের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লো। “তোমরা যে যেখানে আছো, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো”—এই বার্তা পেয়ে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লো মুক্তিযুদ্ধে। আমার দাদা বলতেন, সেদিনের মানুষগুলো যেন এক নতুন প্রাণশক্তি পেয়েছিল, মনে হয়েছিল যেন আর ভয় নেই, আছে শুধু মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। এই সময়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ জনযুদ্ধে রূপ নেয়। প্রতিটি বাঙালির মনে তখন একটাই স্বপ্ন, একটাই লক্ষ্য—স্বাধীন বাংলাদেশ।

রণাঙ্গনের অগ্নিপরীক্ষা: দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ! এই নয় মাসের প্রতিটি দিন ছিল যেন এক অগ্নিপরীক্ষা। ২৫শে মার্চের কালো রাতের পর যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরীহ বাঙালির উপর, তখন আমাদের মা-বোনেরা, সাধারণ কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক—সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লো মুক্তিযুদ্ধে। এটা শুধু একটা যুদ্ধ ছিল না, এটা ছিল আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এক মরণপণ সংগ্রাম। আমার দাদী বলতেন, সে সময় গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নারীদের ওপর চালানো হয়েছে অবর্ণনীয় নির্যাতন। কিন্তু এত কিছুর পরেও বাঙালি জাতি দমে যায়নি। বরং আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা দিনের পর দিন জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, তাদের আত্মত্যাগ আমাদের স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করেছে। এই যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়তে হয়। প্রায় ৩০ লাখ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছে এই স্বাধীনতা।

মুক্তিবাহিনীর অসম সাহস

আমার কাছে মুক্তিযোদ্ধারা যেন রূপকথার বীরের মতো। নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে তারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়ে গেছেন। ট্রেনিংয়ের অভাব, অস্ত্রের অভাব, খাদ্যের অভাব—সবকিছু উপেক্ষা করে তারা দেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেছেন। গেরিলা যুদ্ধ থেকে সম্মুখ যুদ্ধ—সবখানেই তারা দেখিয়ে দিয়েছেন নিজেদের অসম সাহস। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় যখন মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প শুনতাম, তখন গায়ের লোম খাড়া হয়ে যেত। কী অসম্ভব দেশপ্রেম আর আত্মত্যাগের উদাহরণ তারা স্থাপন করেছেন! সাধারণ মানুষও তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে, তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছে। এটাই ছিল সত্যিকারের জনযুদ্ধ, যেখানে পুরো জাতি এক হয়ে শত্রুর মোকাবিলা করেছে। তাদের এই আত্মত্যাগই আমাদের আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি।

বিশ্বজুড়ে সমর্থন ও স্বীকৃতি

방글라데시 독립 역사 - **Prompt for 7th March Speech (1971):**
    "A grand, cinematic image depicting Sheikh Mujibur Rahma...

মুক্তিযুদ্ধ শুধু আমাদের দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, এর পক্ষে বিশ্বজুড়ে জনমত তৈরি হয়েছিল। ভারত আমাদের সবথেকে বড় বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে, আশ্রয় দিয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশ, অনেক শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলেছেন, বিশ্ববাসীকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার কথা জানিয়েছেন। জর্জ হ্যারিসন আর পণ্ডিত রবিশঙ্করের ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এর কথা তো আমরা সবাই জানি। এটা ছিল বিশ্বজুড়ে আমাদের স্বাধীনতার জন্য এক বিশাল সমর্থন। এই সমর্থন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবলকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল, তাদের বিশ্বাস জন্মিয়েছিল যে তারা একা নন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এই সমর্থন আমাদের স্বাধীনতাকে দ্রুত ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছিল। আমার মনে হয়, এমন কঠিন সময়ে বিশ্বজুড়ে এমন নৈতিক সমর্থন পাওয়াটা ছিল সত্যিই এক বিশাল ব্যাপার। এমনকি কানাডায় বসবাসরত হাতে গোনা কয়েকজন বাংলাদেশিও সংগঠিত হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অর্থ ও যুদ্ধসরঞ্জাম পাঠিয়েছিলেন।

Advertisement

বিজয়ের আলোয় আলোকিত এক নতুন দেশ

১৬ই ডিসেম্বর! এই দিনটা শুনলেই আমার বুকের ভিতরটা গর্বে ভরে ওঠে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে আমরা যেদিন চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিলাম, সে এক অসাধারণ অনুভূতি। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, আর বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নিয়েছিল এক নতুন দেশ – স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমার মনে হয়, সেদিন যারা বিজয়ের উল্লাস দেখেছিলেন, তাদের চোখে কত আনন্দাশ্রু ছিল! সেই মুহূর্তটা শুধু একটি দিনের ঘটনা ছিল না, এটি ছিল হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার গল্প, একটি জাতির স্বপ্নপূরণের দিন। ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। বিজয়ের এই আলোয় আলোকিত হয়ে আমরা একটি নতুন পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম।

১৬ই ডিসেম্বরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ

বিজয়ের দিন, ১৬ই ডিসেম্বরের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আমার হৃদয়ে চিরকাল জ্বলজ্বল করবে। যখন পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করলেন, তখন তা ছিল শুধু একটি সামরিক পরাজয় নয়, এটি ছিল বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার চরম জয়। সারা বিশ্বের মিডিয়াতে তখন বাংলাদেশের বিজয়ের খবর ফলাও করে প্রচারিত হচ্ছিল। আমার মনে হয়, সেদিন যারা রেডিও বা টেলিভিশনে খবর শুনেছিলেন, তাদের বুকের ভিতরটা কেমন একটা শীতল শান্তির অনুভূতিতে ভরে গিয়েছিল। এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কত শত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল এই স্বাধীনতা। এটা শুধু একটি তারিখ নয়, এটা আমাদের জাতীয় জীবনের এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায়, যা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে অনুপ্রেরণা যোগায়। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা আরও কঠিন।

স্বাধীনতার সূর্যোদয়: নতুন পথের দিশা

বিজয়ের পর বাংলাদেশ যেন এক নতুন সূর্যোদয়ের দিকে এগিয়ে যায়। একদিকে ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের বিশাল চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে ছিল সদ্য স্বাধীন দেশের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার কঠিন কাজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে এলেন, আর তার নেতৃত্বে শুরু হলো সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ—সবকিছুই পাকিস্তানি বাহিনী ধ্বংস করে দিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি জাতি আবারও এক হয়ে কাজ শুরু করলো। আমার মনে হয়, সেই সময়ে মানুষের মনে ছিল এক অদ্ভুত উদ্দীপনা, এক নতুন দেশ গড়ার অদম্য স্পৃহা। এই পথচলাটা সহজ ছিল না, অসংখ্য বাধা পেরিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হয়েছে। স্বাধীনতার এই সূর্যোদয় আমাদের শুধু একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দেয়নি, বরং একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার নতুন পথের দিশা দিয়েছিল।

স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম

স্বাধীনতার পর, আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের পথচলাটা মোটেও মসৃণ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ, যেখানে সবকিছুর অভাব, চারিদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। কিন্তু আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার অদম্য নেতৃত্বে এই দেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার সংগ্রাম শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। এটা শুধু একটি অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সংগ্রাম ছিল না, এটা ছিল আমাদের আত্মপরিচয়কে আরও সুদৃঢ় করার সংগ্রাম। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় বাবা-মার মুখে শুনতাম, কীভাবে সেই সময় মানুষ নিজ হাতে ইট-বালু দিয়ে রাস্তাঘাট মেরামত করতো, কীভাবে সবাই মিলেমিশে দেশের পুনর্গঠনে অংশ নিতো। এটা ছিল এক নতুন যাত্রার শুরু, যেখানে প্রতিটি বাঙালি ছিল একে অপরের সহযোগী। এই পথচলা আমাদের শিখিয়েছে resilience বা টিকে থাকার ক্ষমতা, যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করার সাহস।

জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রথম পদক্ষেপ

বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এলেন, তখন তার সামনে ছিল বিশাল এক দায়িত্ব। একদিকে দেশের পুনর্গঠন, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে সদ্য স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি আদায়। তিনি অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বিভিন্ন দেশ থেকে স্বীকৃতি আদায় করেন এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার উদ্যোগ নেন। শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য—সবক্ষেত্রেই তিনি মৌলিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছিলেন। আমার মনে হয়, এত অল্প সময়ে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য যে গভীর প্রজ্ঞা এবং দৃঢ়তা প্রয়োজন ছিল, তা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে পুরোপুরি বিদ্যমান ছিল। তার এই পদক্ষেপগুলোই ছিল ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রথম ইট। আমরা যারা এখন একটু উন্নত বাংলাদেশে বাস করছি, তাদের জানা উচিত এই প্রথম ধাপগুলো কতটা কঠিন ছিল এবং কিভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে আজকের এই ভিত্তি তৈরি করেছেন।

ভবিষ্যতের পথে আমাদের পথচলা

আজ আমরা যখন উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে, এই স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল সেই স্বাধীনতার পর থেকেই। কৃষি থেকে শিল্প, শিক্ষা থেকে প্রযুক্তি—সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে। আমাদের পোশাক শিল্প, রেমিটেন্স, আইটি খাত—প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিচ্ছি। আমার মনে হয়, এই পথচলাটা আমাদের জন্য খুবই অনুপ্রেরণামূলক। আমরা শুধু অতীতের গৌরব নিয়ে বসে নেই, বরং ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখছি। আমাদের তরুণ প্রজন্ম আজ বিশ্বমানের সব কাজ করছে, যা আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের এই পথচলায় অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা এসেছে, কিন্তু আমরা দমে যাইনি। ঠিক যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অদম্য স্পৃহার মতোই, আমরা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত। এই বাংলাদেশ আমাদের, আর একে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার দায়িত্বও আমাদের সবার।

ঘটনা (Event) তারিখ (Date) তাৎপর্য (Significance)
ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ (1952) মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ১৯৫৪ (1954) মুসলিম লীগের পরাজয় ও গণতান্ত্রিক চেতনার স্ফুরণ
ছয় দফা আন্দোলন ১৯৬৬ (1966) স্বায়ত্তশাসনের প্রথম সুস্পষ্ট দাবি
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ১৯৬৮ (1968) বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসানোর অপচেষ্টা ও গণরোষ
৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ১৯৬৯ (1969) আইয়ুব খানের পতন ও গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রাম
৭০ এর সাধারণ নির্বাচন ১৯৭০ (1970) আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয় ও স্বাধীনতার ম্যান্ডেট
৭ই মার্চের ভাষণ ১৯৭১ (1971) ০৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক ও জাতিকে ঐক্যবদ্ধকরণ
স্বাধীনতা ঘোষণা ১৯৭১ (1971) ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
বিজয় দিবস ১৯৭১ (1971) ১৬ ডিসেম্বর মুক্তির চূড়ান্ত বিজয় ও নতুন দেশের জন্ম
Advertisement

글을মাচি며

আহা, আমাদের এই প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিটি ধাপই যেন এক গৌরবময় উপাখ্যান। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছয় দফার দাবি, তারপর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ আর সবশেষে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ—এই প্রতিটি অধ্যায়ই আমাদের বাঙালি হিসেবে গর্বিত করে তোলে। এই পথচলাটা মোটেও সহজ ছিল না, অসংখ্য আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আজকের এই স্বাধীন ভূমি। আমার মনে হয়, এই ইতিহাস শুধু জানার জন্য নয়, বরং আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায় ভবিষ্যতের পথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে চলার জন্য। আসুন, আমাদের পূর্বপুরুষদের এই আত্মত্যাগের মহিমা হৃদয়ে ধারণ করে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি।

알아두면 쓸모 있는 정보

১. ভাষা আন্দোলনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের জাতীয় শহিদ দিবস নয়, এটি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বজুড়ে পালিত হয়। এটি আমাদের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য এবং বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধার এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

২. ছয় দফার গুরুত্ব: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ছয় দফা ছিল মূলত পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি। এই দফাগুলোই পরোক্ষভাবে স্বাধীনতার প্রথম সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরি করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে।

৩. ৭ই মার্চের ভাষণের বিশেষত্ব: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ভাষণ ছিল অলিখিত এবং স্বতঃস্ফূর্ত, যেখানে একটি জাতির পরাধীনতা থেকে মুক্তির চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

৪. মুক্তিযুদ্ধে সাধারণ মানুষের ভূমিকা: আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ ছিল না। গ্রামের সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, মা-বোনেরা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের সহযোগিতা, আশ্রয় দান এবং তথ্য সরবরাহ ছাড়া এই বিজয় সম্ভব হতো না।

৫. স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের পুনর্গঠন: যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সফল হন।

Advertisement

중요 사항 정리

আমাদের স্বাধীনতা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না; এটি ছিল ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রাম, আত্মত্যাগ এবং অদম্য আকাঙ্ক্ষার ফল। ভাষা শহীদেরা মাতৃভাষার সম্মান রক্ষা করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করেছিলেন, যা পরবর্তীতে ছয় দফার মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সেই সংগ্রামকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করে, এবং দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বরে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। এই পুরো যাত্রাপথই আমাদের জাতিসত্তা, আত্মমর্যাদা এবং অদম্য সাহসের প্রতীক। আজকের এই স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আমাদের পূর্বপুরুষদের এই মহান আত্মত্যাগেরই ফল।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: আমাদের এই স্বাধীনতার মূল প্রেক্ষাপটটা আসলে কী ছিল, মানে কীভাবে আমরা এই পথে হেঁটেছিলাম?

উ: আহা, এই প্রশ্নটা যখনই মনে আসে, আমার বুকটা কেমন যেন ছ্যাঁৎ করে ওঠে। স্বাধীনতার পেছনে লুকিয়ে আছে এক দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প, যা শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই। ভাবুন তো একবার, আমরা বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি সবকিছুর ওপরই যেন পশ্চিম পাকিস্তানের এক চাপা কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চক্রান্ত, অর্থনৈতিক বৈষম্য – যেখানে আমাদের সম্পদ দিয়ে তাদের উন্নয়ন করা হচ্ছিল, আর আমরা শুধু বঞ্চিতই হচ্ছিলাম।আমার দাদু প্রায়ই বলতেন, সেই সময়টা ছিল অপমান আর বঞ্চনার এক নিরন্তর যুদ্ধ। ৬ দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান – প্রতিটি ঘটনাই ছিল যেন স্বাধীনতার দিকে এক ধাপ করে এগিয়ে যাওয়া। আমি যখন এই ইতিহাসগুলো পড়ি বা শুনি, মনে হয় যেন সেই সময়ের সাধারণ মানুষের মুখে লেগে থাকা কষ্ট আর প্রতিবাদের আগুনটা আজও অনুভব করতে পারি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় হয়েছিল, কিন্তু সেই ফলাফলকে অস্বীকার করে যখন ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করা হলো, তখনই বাঙালির স্বপ্ন যেন আরও বেশি করে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত হলো। ২৫শে মার্চের কালরাতে নিরপরাধ বাঙালির ওপর যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, সেটাই ছিল আসলে শেষ পেরেক, যা আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে দেয়নি। আমার মনে হয়, এই প্রেক্ষাপটটাই আমাদের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি তৈরি করেছিল, যার ওপর দাঁড়িয়েছিল আমাদের অদম্য সাহস আর মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।

প্র: আমাদের মুক্তি সংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাটা আসলে কেমন ছিল?

উ: বঙ্গবন্ধু, আমাদের জাতির জনক! যখনই তাঁর কথা ভাবি, আমার চোখে ভেসে ওঠে একজন অবিসংবাদিত নেতার ছবি, যিনি বাঙালির সব স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষাকে নিজের বুকে ধারণ করেছিলেন। বিশ্বাস করুন, তার মতো বিচক্ষণ আর দূরদর্শী নেতা না থাকলে আমাদের স্বাধীনতার পথ হয়তো আরও অনেক কঠিন হতো। আমার মনে হয়, তিনি শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাঙালির মুক্তির কান্ডারী, যাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটা আজও আমার কানে বাজলে শরীরে কাঁটা দেয়। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ – এই কথাগুলো নিছকই কিছু শব্দ ছিল না, এটা ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙার এক বজ্রধ্বনি, যা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে স্বাধীনতার আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল।তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল এবং তিনিই ৬ দফার মতো সাহসী কর্মসূচি দিয়েছিলেন, যা ছিল স্বায়ত্তশাসনের এবং পরে স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। ২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করলেও, তার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং তার অনুপস্থিতিতে তার নামেই মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখনই আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়ি, বঙ্গবন্ধুর ইস্পাত কঠিন মনোবল আর অদম্য দেশপ্রেমের কথা মনে পড়লে মনটা শ্রদ্ধায় ভরে ওঠে। তিনি যেন ছিলেন একটা চুম্বকের মতো, যিনি বিক্ষিপ্ত বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ করে স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর করে তুলেছিলেন। তার ক্যারিশমা, তার সাহস, তার ত্যাগের কাছে আমরা চিরঋণী।

প্র: স্বাধীনতা অর্জনে সাধারণ মানুষের ত্যাগ ও অবদান কেমন ছিল, শুধু মুক্তিযোদ্ধারা নন, সাধারণ মানুষও কি কোনো ভূমিকা রেখেছিলেন?

উ: কী যে বলেন আপা/ভাইয়া! শুধু মুক্তিযোদ্ধারা নন, আমাদের এই স্বাধীনতার পেছনে সাধারণ মানুষের ত্যাগ আর অবদান ছিল অবিশ্বাস্য, যা ভাবলে আজও আমার চোখে জল এসে যায়। ভাবুন তো একবার, যাদের হাতে অস্ত্র ছিল না, প্রশিক্ষিত সৈনিকও ছিলেন না, তারাও কীভাবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রতিরোধের দেয়াল তুলেছিলেন!
আমার পরিচিত একজন বৃদ্ধা ছিলেন, তিনি প্রায়ই গল্প করতেন, কীভাবে রাতের আঁধারে গ্রামের মহিলারা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য লুকিয়ে খাবার রান্না করে পাঠাতেন, কীভাবে তারা খবর আদান-প্রদান করতেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এইগুলো কি সাধারণ কোনো কাজ ছিল?
মোটেই না! প্রায় ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীনতা পেয়েছি। এই শহীদদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র। অগণিত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, উদ্বাস্তু শিবিরে অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করেছেন, শুধু একটাই আশায় – একটা স্বাধীন দেশ পাবো। অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন, শত্রুপক্ষের গতিবিধির খবর দিয়েছেন, এমনকি অনেকে সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ না নিলেও পেছন থেকে তাদের মনোবল জুগিয়েছেন। আমার মনে হয়, এই দেশের প্রতিটি ধূলিকণা, প্রতিটি নদী, প্রতিটি গ্রামের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে সাধারণ মানুষের অসীম ত্যাগের গল্প। এই যুদ্ধটা শুধু বন্দুকের লড়াই ছিল না, এটা ছিল প্রতিটি বাঙালির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, তাদের সম্মিলিত স্বপ্ন আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফসল। আমরা যদি তাদের কথা ভুলে যাই, তবে আমাদের এই স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।