ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রেখেছে অসামান্য অবদান। এর সবুজ চত্বর, ঐতিহাসিক ভবন আর জ্ঞানচর্চার অবাধ পরিবেশ সবসময় আমাকে মুগ্ধ করে। বিভিন্ন সময়ে আমি নিজে দেখেছি, কিভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের যে কোনো ক্রান্তিকালে নিজেদের জীবন বাজি রেখে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। এখানে কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে শুরু করে আধুনিক সব বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে।আসুন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এবং প্রধান বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: আমার চোখে দেখা কিছু স্মৃতি আর বর্তমান প্রেক্ষাপটঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। আমার জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে। ছাত্রজীবনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, মিছিল, মিটিং—সবকিছুই যেন আজও চোখের সামনে ভাসে। সময়ের সাথে অনেক কিছু বদলে গেলেও, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণশক্তি আজও অমলিন।
ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি কার্জন হল

কার্জন হল শুধু একটি ভবন নয়, এটি যেন ঐতিহ্যের ধারক। লাল ইটের গাঁথুনি, সুউচ্চ গম্বুজ আর কারুকার্যখচিত দেওয়ালগুলো দেখলে মনে হয় যেন ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা কোনো ছবি। আমি প্রায়ই বিকেলে কার্জন হলের সামনে গিয়ে বসতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধুদের সাথে গল্প করতাম। এখানকার নীরবতা আর প্রকৃতির সবুজ যেন মনকে শান্তি এনে দিত।
কার্জন হলের স্থাপত্যশৈলী
কার্জন হলের স্থাপত্যশৈলী সত্যিই অসাধারণ। এটি ইউরোপীয় এবং মুঘল স্থাপত্যের এক চমৎকার মিশ্রণ। এর প্রতিটি ইট যেন কথা বলে, জানান দেয় অতীতের নানা ঘটনা।
বিজ্ঞান অনুষদের প্রাণকেন্দ্র
কার্জন হল শুধু দেখতে সুন্দর নয়, এটি বিজ্ঞান অনুষদের প্রাণকেন্দ্র। এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিতসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস ও ল্যাব অনুষ্ঠিত হয়।
শতবর্ষের স্মৃতি বিজড়িত মধুর ক্যান্টিন
মধুর ক্যান্টিন শুধু একটি ক্যান্টিন নয়, এটি যেন আন্দোলনের সূতিকাগার। দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই ক্যান্টিনে বসেই নেওয়া হয়েছে। আমি দেখেছি, এখানে ছাত্রনেতারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা একসাথে বসে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করত।
রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু
মধুর ক্যান্টিন সবসময়ই রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা এখানে বসেই তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতেন।
সাধারণ ছাত্রদের মিলনমেলা
মধুর ক্যান্টিন শুধু নেতাদের জন্য নয়, এটি সাধারণ ছাত্রদেরও মিলনমেলা। এখানে সবাই একসাথে চা-কফি খেতে খেতে গল্প করত, আড্ডা দিত।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অপরাজেয় বাংলা
অপরাজেয় বাংলা শুধু একটি ভাস্কর্য নয়, এটি যেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতীক। এই ভাস্কর্যটি দেখলে মনে হয় যেন ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ মূর্ত হয়ে উঠেছে। আমি প্রায়ই অপরাজেয় বাংলার সামনে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবতাম, দেশের জন্য কিছু করার অনুপ্রেরণা পেতাম।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি
অপরাজেয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কিভাবে দেশের জন্য মানুষ জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল।
নতুন প্রজন্মের প্রেরণা
অপরাজেয় বাংলা নতুন প্রজন্মের জন্য প্রেরণা। এটি তাদের শেখায়, কিভাবে দেশের জন্য কাজ করতে হয়, কিভাবে দেশের প্রতি ভালোবাসা রাখতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর শুধু একটি স্থান নয়, এটি যেন প্রাণের স্পন্দন। এখানে সবসময় কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলতেই থাকে। নাটক, গান, আবৃত্তি—সবকিছু মিলিয়ে যেন এক উৎসবের আমেজ লেগে থাকে সবসময়।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র। এখানে বিভিন্ন সময়ে নাটক, গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বসন্ত বরণ ও অন্যান্য উৎসব
বসন্ত বরণ, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর নতুন রূপে সেজে ওঠে। নানা রঙের পোশাকে শিক্ষার্থীরা আনন্দে মেতে ওঠে।
বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুযোগ আছে। কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন—সব ধরনের বিষয়ে এখানে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
| অনুষদ | বিভাগ | ইনস্টিটিউট |
|---|---|---|
| কলা অনুষদ | বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস, দর্শন | আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট |
| বিজ্ঞান অনুষদ | গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, পরিসংখ্যান | ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট |
| ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ | ফিনান্স, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টিং, ম্যানেজমেন্ট | বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট |
শিক্ষার্থীদের আবাসন ও হল জীবন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন হল রয়েছে, যেখানে তারা একসাথে থাকে এবং পড়াশোনা করে। হল জীবন শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহানুভূতির সৃষ্টি করে। আমি নিজেও হলে থেকেছি, তাই জানি হল জীবনের গুরুত্ব কতখানি।
ঐতিহ্যবাহী হলসমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ঐতিহ্যবাহী হল রয়েছে, যেমন—সলিমুল্লাহ হল, জহুরুল হক হল, রোকেয়া হল। এই হলগুলোর নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে।
হল জীবনের সংস্কৃতি
হল জীবনে শিক্ষার্থীরা একসাথে পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। এটি তাদের মধ্যে একাত্মতা ও ভালোবাসার সৃষ্টি করে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের জীবনের অংশ। এর প্রতিটি ইট, প্রতিটি ঘাস যেন আমাদের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের কথা বলে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ক্যাম্পাসের প্রতিটি ধুলিকণা, প্রতিটি স্মৃতি আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। এখানকার শিক্ষক, বন্ধু এবং পরিবেশ আমাকে যা শিখিয়েছে, তা সারা জীবন আমার পাথেয় হয়ে থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আবেগ, একটি ভালোবাসা।
শেষ কথা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার জীবনের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। এখানকার সবুজ চত্বর, মধুর ক্যান্টিন, কার্জন হল—সবকিছুই আমার স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে। আমি গর্বের সাথে বলি, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি যেন সবসময় অক্ষুণ্ণ থাকে, সেই কামনা করি।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য HSC পরীক্ষায় ভালো ফল করা আবশ্যক।
২. এখানে বিভিন্ন অনুষদে ভর্তির জন্য আলাদা আলাদা যোগ্যতা লাগে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়।
৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে প্রচুর বই রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে সহায়তা করে।
৫. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্কলারশিপ ও আর্থিক সহায়তার সুযোগ আছে, যা মেধাবী ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই উপযোগী।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম পীঠস্থান। এখানকার ঐতিহ্য, পরিবেশ এবং সুযোগ-সুবিধা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হতে সাহায্য করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি আবেগ এবং একটি গর্ব।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖
প্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত?
উ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত হওয়ার মূল কারণ হল এর শিক্ষা এবং গবেষণার মান। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি প্রাচ্যের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। এখানকার শিক্ষকরা যেমন মেধাবী, তেমনি এখানকার শিক্ষার্থীরাও দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। এছাড়াও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ঐতিহ্য এটিকে অক্সফোর্ডের মতো মর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে। সত্যি বলতে, আমার নিজেরও মনে হয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে দাঁড়ালে যেন জ্ঞানের এক অন্য জগতে প্রবেশ করি।
প্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি বিষয় পড়ার সুযোগ আছে?
উ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ফার্মেসি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আরও অনেক বিষয়ে পড়ার সুযোগ আছে। এখানে বিভিন্ন অনুষদের অধীনে অসংখ্য বিভাগ রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের আগ্রহ এবং যোগ্যতা অনুযায়ী পড়াশোনা করতে পারে। আমি নিজে দেখেছি, অনেক শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের বিষয় খুঁজে নিতে হিমশিম খায়, কারণ এখানে এত বেশি অপশন!
তবে আমার মনে হয়, এটাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষত্ব – এখানে সবার জন্য কিছু না কিছু আছে।
প্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা কি ছিল?
উ: বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণহত্যা চালায়, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। আমার মনে আছে, ছোটবেলায় নানীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের কথা শুনে চোখে জল এসে যেত। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল প্রতীক।
📚 তথ্যসূত্র
Wikipedia Encyclopedia
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과
구글 검색 결과






